পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র - সামান্তরিকের সূত্র

সূত্র : কোন সামান্তরিকের একই বিন্দু হতে অঙ্কিত সন্নিহিত বাহু দুটি যদি কোন কণার উপর একই সময়ে ক্রিয়ারত দুটি ভেক্টর রাশির মান ও দিক নির্দেশ করে, তা হলে ঐ বিন্দু হতে অঙ্কিত সামান্তরিকের কর্ণই এদের লব্ধির মান ও দিক নির্দেশ করে।

 

ব্যাখ্যা ঃ

 মনে করি O বিন্দুতে একটি কণার উপর  OA=POC=Q  ই দুটি ভেক্টর রাশি একই সময়ে  α কোণে ক্রিয়া করছে [চিত্র ১.১৬। OA ও OC-কে সন্নিহিত বাহু ধরে OABC সামন্তরিকটি অংকন করি এবং OB যুক্ত করি। এই সূত্রানুসারে উভয় ভেক্টরের ক্রিয়াবিদু O থেকে অংকিত কৰ্ণ OB-ই ভেক্টর P ও Q-এর লব্ধি R নির্দেশ করে।

 OA+OC=OB

বা, P + Q = R

চিত্র : ১.১৬

লব্ধির মান নির্ণয় :

মনে করি লব্ধির মান R এবং <AOC=α কোণটি সূক্ষ্মকোণ। এখন B বিন্দু হতে OA-এর বর্ধিত অংশের উপর BN টানি যা বর্ধিত OA বাহুকে N বিন্দুতে ছেদ করল।

AB ও OC সমান্তরাল।

α। আবার OBN ত্রিভুজের,

OB2 = ON2 + BN2 = (OA + AN)2 + BN2 

        = OA2 + 20A.AN + AN2 + BN2

আবার, BNA সমকোণী ত্রিভুজে, AB2 = AN2 + BN2

বা, OC2 = AN2 + BN2 [ AB = OC ] 

এখন ত্রিকোণমিতির সাহায্যে আমরা পাই, cos α ANAB

AN = AB cos α= OC cos α

সুতরাং OB2 = OA2 + AB2 + 20A.AB cos α

 বা, OB2 = OA2 + OC2 + 2OA. OC cos α

বা, R2 = P2 + Q2 + 2PQ cos α

R=P2+Q2+2PQ cosα   (4)

লব্ধির দিক নির্ণয় :

মনে করি P-এর সাথে θ কোণ উৎপন্ন করে লব্ধি R ক্রিয়া করছে।

সুতরাং OBN সমকোণী ত্রিভুজে,

tanθ=BNON=BN(OA+AN) 

=AB sinα(OA+AB cosα)=Q sin α(P+Q cos α)      (5)

BAN সমকোণী ত্রিভুজে, sin α=BNAB 

BN=AB sin α

 

সমীকরণ (4) এবং সমীকরণ (5) হতে যথাক্রমে R এবং θ  পাওয়া যায়।

সুতরাং, দুটি ভেক্টর একই দিকে ক্রিয়াশীল হলে এদের লন্ধির মান হবে ভেক্টরদ্বয়ের যোগফল এবং দিক হবে ভেক্টরদ্বয় যেদিকে ক্রিয়া করে সেদিকে।

 

লব্ধির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মান 

(Maximum and minimum value of the resultant)

মনে করি দুটি ভেক্টর রাশি P এবং Q একই সময়ে কোন বিন্দুতে α কোণে ক্রিয়া করছে। ভেক্টর যোগের সামান্তরিক সূত্রানুসারে এদের লব্ধির মান

R=P2+Q2+2PQ cos α

(ক) উপরোক্ত সমীকরণ হতে বলা যায় লব্ধি R-এর মান P এবং Q -এর মধ্যবর্তী কোণের উপর নির্ভর করে।

R -এর মান সর্বাধিক হবে যখন cos C-এর মান সর্বাধিক হবে অর্থাৎ cos α = 1 = cos 0°

বা, α = 0° হবে।    

লব্ধির সর্বোচ্চ মান

R=P2+Q2+2PQ cos α

=(P+Q)2=(P+Q)

অতএব, দুটি ভেক্টর যখন একই সরলরেখা বরাবর পরস্পর একই দিকে ক্রিয়া করে তখন তাদের লব্ধির মান সর্বোচ্চ হবে এবং এই সর্বোচ্চ মান ভেক্টর রাশি দুটির যোগফলের সমান হবে।

 অন্যভাবে বলা যায়, দুটি ভেক্টর রাশির লন্ধির মান এদের যোগফল অপেক্ষা বড় হতে পারে না । 

(খ) লব্ধি R-এর সর্বনিম্ন মান হবে যখন cos α -এর মান সর্বনিম্ন হবে অর্থাৎ cos α =- 1 = cos 180°

বা, α = 180° হবে।

লব্ধির সর্বনিম্ন মান,

R=P2+Q22PQ =(PQ)2=PQ

অতএব, দুটি ভেক্টর রাশি যখন একই সরলরেখা বরাবর পরস্পর বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে তখন তাদের লঙ্ঘির মান সর্বনিম্ন হবে এবং লক্ষির সর্বনিম্ন মান ভেক্টর রাশি দুটির বিয়োগফলের সমান হবে। সুতরাং বলা যায়, দুটি ভেক্টর রাশির সর্বনিম্ন মান এদের বিয়োগফল অপেক্ষা ছোট হতে পারে না। এখানে উল্লেখ্য যে (7) নং সমীকরণে ~ চিহ্নটি P এবং Q-এর মধ্যে বিয়োগফল নির্দেশ করে, তবে P এবং Q এদের মধ্যে যেটি বড় সেটি আগে লিখতে হবে অর্থাৎ Q যদি P অপেক্ষা বড় হয় তবে P Q =QP

 

১.৬ ভেক্টরের বিয়োগ

Subtraction of vectors

দুটি ভেক্টর রাশির বিয়োগ বলতে একটি ভেক্টরের সাথে অপরটির ঋণাত্মক ভেক্টরের যোগফল বুঝায়। ->

P,  Q   হলো ভেক্টর দুটির বিয়োগফল  C হলে দেখা যায়, C =  P - Q = P + (- Q

ভেক্টর যোগের ত্রিভুজ সূত্র, সামান্তরিক সূত্র ও বহুভুজ সূত্র প্রভৃতি ভেক্টরের বিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। 

(ক) ত্রিভুজ সূত্রের সাহায্যে ভেক্টরের বিয়োগফল নির্ণয় :

চিত্র : ১.১৭

ধরা যাক  P  ও Q ভেক্টর দুটির বিয়োগফল নির্ণয় করতে হবে। প্রথমে ভেক্টর দুটিকে মান ও দিকে অপরিবর্তিত রেখে একই আদি বিন্দু হতে OA ও OB অঙ্কন করতে হয় [চিত্র ১:১৭]। এরপর Q -এর প্রান্ত বিন্দু B-এর সাথে P -এর প্রান্ত বিন্দু A যোগ করলে BA -ই মানে ও দিকে PQ ভেক্টরকে সূচিত করে।

অতএব, BA = P - Q

(খ) সামান্তরিকের সূত্রের সাহায্যে ভেক্টরের বিয়োগফল নির্ণয় ঃ

ধরা যাক PQ দুটি ভেক্টর। PQ ভেক্টর দুটিকে একই আদি বিন্দু হতে উপযুক্ত বাহু দ্বারা সূচিত করতে হয়[চিত্র ১:১৮]। এরপর Q -এর সমান অথচ বিপরীতমুখী বাহু দ্বারা - Q -কে নির্দেশ করা হয়। এখন OA ও OC-কে সন্নিহিত বাহু ধরে OADC সামান্তরিক অঙ্কন করলে কর্ণ OD উক্ত ভেক্টর দুটির বিয়োগফল নির্দেশ করে । 

চিত্র : ১.১৮

অর্থাৎ, কর্ণ  OD = OA + AD

= P + (- Q) = P - Q। 

১.৭ ভেক্টর যোগের কয়েকটি সূত্র

Some laws of vector addition

(ক) বিনিময় সূত্র (Commutative law) : 

P + Q = Q + P

প্রমাণ : মনে করি, PQ দুটি ভেক্টর রাশি এবং R রাশি দুটির লব্ধি [ চিত্র ১:১৯ ]।

চিত্র : ১.১৯

ত্রিভুজ সূত্র অনুসারে, OAB ত্রিভুজে

R  = P + Q

অর্থাৎ OB = OA + AB

এখন OABC সামান্তরিক অঙ্কন করি এবং OC ও CB-এ যথাক্রমে AB ও OA এর ন্যায় তীর চিহ্নিত করি। OCB ত্রিভুজে

      OB = OC + CB    (ত্রিভুজ সূত্র অনুসারে),

'অর্থাৎ P + Q = Q + P

এটিই হল বিনিময় সূত্র ।

তেমনি স্কেলার রাশিও বিনিময় সূত্র মেনে চলে।

 

(খ) সংযোজন সূত্র (Associative law) : (P + Q )+ R - P+(Q+ P)

চিত্র :১.২০

মনে করি P, Q এবং R তিনটি ভেক্টর রাশি [চিত্র ১:২০ ]। এদেরকে যথাক্রমে AB, BC এবং CD রেখা দ্বারা সূচিত করা হয়েছে। এখন AC, BD এবং AD যোগ করি। অতএব ত্রিভুজের সূত্র হতে পাই,

ABC ত্রিভুজে  AC =  AB + BC = P + Q

ACD ত্রিভুজে, AD = AC + CD

=( P + Q)  = R

আবার, BCD ত্রিভুজে, BD =  BC+ CD = Q+ R   (9)

এবং ABD ত্রিভুজে, AD = AB + BD = P + ( Q+ R)   (10)

সমীকরণ (9) এবং সমীকরণ (10) হতে পাই,

(P+Q) + R = P + (Q+ R)

 

 

 

 

 

Content added || updated By

আরও দেখুন...